বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
সাজ্জাদ বিন আলম সৌরভ- ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে করা মামলা থেকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ১২ জন আসামিকে বাদ দিতে আদালতে যান বাদী। কিন্তু আদালতে ৫ ঘণ্টা আটক থাকেন তিনি। পরে জামিন নিয়ে ছাড়া পান। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর সিএমএম আদালতে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত (২৯ আগস্ট) রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতয়ালি আমলি আদালতে ১২৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত (৪ আগস্ট) রংপুরে নিহত মাহমুদুল হাসান মুন্নার বাবা কাউনিয়া উপজেলার বরুয়াহাট এলাকার আব্দুল মজিদ। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে রংপুর কোতোয়ালি থানাকে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রকাশ পায় (৪ আগস্ট) নিহত মাহমুদুল হাসান মুন্না একজন ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। মামলায় আসামির তালিকায় একাধিক বিএনপি কর্মীসহ একজন সাংবাদিকের নাম থাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে সর্বত্র। এরপর মঙ্গলবার মামলার বাদী আব্দুল মজিদ ১২ জন আসামির নাম প্রত্যাহার চেয়ে এফিডেভিটের কাগজ আদালতে দাখিল করে কাঠগড়ায় দাঁড়ালে বিচারক বাদীর কাছে জানতে চান, তিনি কেন এই আসামিদের নাম প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তখন বাদী আদালতকে জানান, তিনি আসামিদের চেনেন না।
বিচারকের জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে মামলার বাদী আব্দুল মজিদ জানান, তার কাছে ফাঁকা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিলেন হাজী শাহ আলম ও অ্যাডভোকেট রায়হানুজ্জামান নামের দুই ব্যক্তি। এরপর আদালত এফিডেফিট গ্রহণ করে মামলার বাদীকে কাঠগড়ায় আটক থাকার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন দিয়ে ৫ ঘণ্টা পর মুক্ত হন আব্দুল মজিদ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার বাদী আব্দুল মজিদ যে দুই ব্যক্তির প্ররোচনায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন তাদের একজন হাজী শাহ আলম। তিনি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের ভাই। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন সক্রিয় নেতা। অপর ব্যক্তি রায়হানুজ্জামান পেশায় একজন আইনজীবী।
মামলার আইনজীবী মো. নাসির বলেন, মামলার প্রধান আইনজীবী না থাকায় আমি এই মামলাটিতে যুক্ত হয়েছি মাত্র। এর থেকে বেশি কিছু বলার নাই। তবে তিনি নিশ্চিত করেন, ৯টি এফিডেভিটের মাধ্যমে ১২ জন আসামিকে বাদ দিতে আদালতে এসেছিলেন মামলার বাদী আব্দুল মজিদ। অন্যদের প্ররোচনায় মামলা করেছেন এবং আসামিদের চেনেন না উল্লেখ করায় বিচারক তাকে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখেছিলেন।
এ বিষয়ে রংপুর বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী আন্দোলনের সদস্যসচিব অ্যাড. পলাশ কান্তি নাগ বলেন, যে কোনো মামলায় প্ররোচনায় কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করা এবং পরবর্তীতে প্রভাবিত হয়ে আবার বাদ দেয়ার বিষয়টি একেবারেই অনৈতিক। আব্দুল মজিদের দায়ের করা এই হত্যা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মোতাহার হোসেনসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়। যার অধিকাংশই লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধা উপজেলার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম ঢুকে পড়ায় মূলত তাদের নাম প্রত্যাহার করতে এসেছিলেন বাদী আব্দুল মজিদ।
আদালত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলার আসামিদের বিষয়ে এখনো ভালোভাবে কিছু জানি না।